বাংলা স্বাস্থ্য টিপস, সংবাদ ও তথ্য



রং ফর্সাকারী ক্রিমে ক্যান্সার হতে পারে

প্রথমে দর্শনদারি পরে গুণ বিচারি- কথাটা সব ক্ষেত্রে সত্যি না হলেও এখনও নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা বেদবাক্যের মতো আমাদের সমাজে প্রচলিত। আর এই ধারণাকে আশ্রয় করে চলছে ‘রং ফর্সা’ করা ক্রিমের ব্যবসা।

প্রথমে দর্শনদারি পরে গুণ বিচারি- কথাটা সব ক্ষেত্রে সত্যি না হলেও এখনও নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা বেদবাক্যের মতো আমাদের সমাজে প্রচলিত। আর এই ধারণাকে আশ্রয় করে চলছে ‘রং ফর্সা’ করা ক্রিমের ব্যবসা।

অনেক আগে থেকেই বাজারে রং ফর্সাকারী ক্রিমের প্রচার ও ব্যবহার দেখা যাচ্ছিল।  সম্প্রতি বেশ কিছু অনলাইন পেইজেও দেখা যাচ্ছে এই ধরনের পণ্য। এসব পণ্য ব্যবহারকারীদের সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো বাড়ছে। একদল গায়ের রংকে কেন্দ্র করে নিজের অবস্থান মাপছেন আর অন্য একদল এই বিষয়কে ব্যবসার অংশ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। 

‘নারী হলেই তাকে ফর্সা হতে হবে, না হলে এই সমাজে তার কোনো মূল্য নেই’ এ বিষয়কে নারীরা আসলে কীভাবে দেখছেন তা জানতে চাওয়া হয় কয়েকজন নারীর কাছে। প্রত্যেকের উত্তরেই একটা সাদৃশ্য পাওয়া যায় আর তা হলে গায়ের রংকে মুখ্য না করে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

‘সেভ দ্যা চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ’য়ের কমিউনিকেইশন অ্যান্ড মিডিয়ার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাজিয়া আফরিন বলেন, “গায়ের রংয়ের চেয়ে ব্যক্তিত্ব আকর্ষণীয় হওয়াটা জরুরি। মানুষ হিসেবে তার কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও ব্যবহার সুন্দর হওয়াটা প্রয়োজন বেশি। কারও ব্যক্তিত্ব সুন্দর ও আকর্ষণীয় হলে তা গায়ের রংকেও ছাপিয়ে যায়। তাই গায়ের রংয়ের প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে নিজেকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত।”

তিনি নিজে কখনও এমন বৈষম্যের স্বীকার হননি। এর পেছনে তিনি নিজের ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা ও অন্যকে সম্মান করার গুণাবলীকেই মুখ্য বলে মনে করেন। তবে সমাজে অনেক ক্ষেত্রে, অনেক নারীকেই এমন পরিস্থিতি ও অপমানের মুখোমুখি হতে হয় । এমন ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা অর্জন ও সুশিক্ষিত হয়ে ওঠাই উপযুক্ত জবাব বলে মনে করেন তিনি।

সহজেই হয়ত বর্ণের বৈষম্য দূর করা সম্ভব না। তবে এই বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা হলে, গায়ের রংকে প্রাধান্য দিচ্ছে এমন পরিচিত কেউ থাকলে তাদের বুঝিয়ে বলা ইত্যাদি নানাভাবে মানসিক পরিবর্তন আনা গেলে গায়ের রং দিয়ে অন্যকে যাচাই করার মনমানসিকতা অনেকটাই পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন, সাজিয়া।

আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলাতে রং ফর্সাকারী ক্রিমের প্রচার ও বিক্রয় চোখে পড়ার মত। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মানুষ বাহ্যিক তথাকথিত সৌন্দর্যের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। বিষয়টা বেশ অবাক করা। এ থেকে একটা বিষয়ই বোঝা যায় আমরা পড়াশুনা করে কেবল শিক্ষিতই হচ্ছি প্রকৃত অর্থে কিছুই শিখছি না।

ইউএন উইমেন’য়ের প্রোগ্রাম সহকারী তেরেজা জেনী গোনছালবেছ বলেন, “যারা এসব ক্রিম বিক্রি করেন তারা হয়ত ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যেই করে থাকেন। তবে যারা নিয়মিত এসব ক্রিম ও লোশন ব্যবহার করেন তারা আসলে নিজেদের ভালোবাসেন না। তারা অন্যের চোখ দিয়ে নিজেকে দেখতে চান; ভালোবাসতে চায়। আর এভাবে কখনও নিজেকে ভালোবাসা যায় না।”

পাত্রী দেখতে গেলে বাছাই করা হয় গায়ের রং সুন্দর কিনা, তার উচ্চতা কেমন, সে মোটা না চিকন ইত্যাদি নানাভাবে। পাত্রীর শিক্ষা, যোগ্যতা বা তার অন্যান্য গুণাবলীর চাইতেও বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় সে দেখতে কেমন তার গায়ের রং ফর্সা না শ্যামলা। এর পেছনে অন্যতম কারণ হল, বউ ফর্সা হলে বংশধরেরা দেখতে ফর্সা হয়।

এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে কী করণীয় জানতে চাইলে তেরেজা বলেন, “মুখে বলে বলে এই ধারণা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কারণ, কথা বলার সময় সবাই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে নয়। তাই এই ধারণায় বিশ্বাসীরা নিজের ঘর থেকেই এর চর্চা শুরু করলে তা বাস্তব রূপ পাবে।”

উদাহরণ দিয়ে জেনী বলেন, “যেমন- পরিবারের কারও জন্য পাত্রী দেখতে গেলে  সুন্দর গায়ের রংয়ের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে সুন্দর মনের প্রতি মনোযোগ দেওয়া, কার গায়ের রং কেমন সে বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে বরং তার মানবিক গুণাবলী ও দক্ষতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হলে, অন্যান্য যারা গায়ের ফর্সা রংকেই প্রাধান্য দেয় তাদেরকে এবিষয়ে বুঝিয়ে বলে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার চেষ্টা করা যেতে পারে। মানুষকে মানুষের মতো করেই সম্মান করা উচিত। সৃষ্টিকর্তা যেভাবে সৃষ্টি করেছেন সেটাকেই ভালোবাসা উচিত।” 

যে কোনো বিজ্ঞাপনে ফর্সা, লম্বা ও চিকন নারীকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করে সকলের সামনে সুন্দরের একটা উদাহরণ দাঁড় করানো হয়েছে যে, সুন্দর হতে হলে এমনই হতে হবে এবং সুন্দর হলে সবাই তোমাকে পছন্দ করবে, না হলে নয়। এটা সামাজিকভাবেই কিশোরদেরকে প্রভাবিত করছে। কিশোর অবস্থায় একজন ছেলে ধরে নিচ্ছে ফর্সা মেয়ে মানেই সুন্দর আবার কিশোরী মেয়েটাও ধরে নিচ্ছে সে যদি ফর্সা না হয় তাহলে কেউ তাকে পছন্দ করবে না। শিশুরা এমন মনোভাব নিয়ে বড় হতে থাকলে এই ধ্যান ধারণা থেকে কখনও বেড়িয়ে আসা সম্ভব না। সমাজ পরিবর্তন করতে চাইলে এই ক্ষুদ্র স্তর থেকেই শিক্ষা শুরু করতে হবে। মানুষকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসা সম্মান করা এবং তার আভ্যন্তরীণ গুণের কদর করা উচিত।   

বাজারে কিনতে পাওয়া এসব ক্রিম আসলে কতটা কার্যকর এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী? জানতে চাইলে নিউ ইউর্কের কস্মেটোলজিস্ট ল্যাভলী শেখ বলেন, “প্রসাধনী হিসেবে রং ফর্সাকারী ক্রিমের মত ক্ষতিকারক কোনো ক্রিম আর নেই।”

সম্প্রতি দেশে এসে রং ফর্সাকারী ক্রিমের চাহিদা ও এর ব্যবহারের পরিমাণ দেখে অবাক হয়ে তিনি বলে, “আমাদের দেশের মানুষ এখনও গায়ের রং নিয়ে এতটা মাথা ঘামায় যে তারা এর ভালো-মন্দ দিক যাচাই করতেই ভুলে যায়। এরা একবারও ভেবে দেখেনা যে, সত্যি যদি কোনো ক্রিম ক্ষতি ছাড়া ত্বক ফর্সা করত তাহলে এই পৃথিবীতে কোন শ্যামলা মানুষ থাকত না।”

রং ফর্সাকারী ক্রিমে ব্লিচ-সহ আরও নানা রকমের শক্তিশালী রসায়নিক পদার্থ থাকে যা ত্বককে সাময়িকভাবে ও দ্রুত ফর্সা করে। তবে ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনে।

ত্বকে র‍্যাশ বা ক্যান্সার ছাড়াও আরও নানান রকমের সমস্যার সৃষ্টি করে। এসব ক্রিম ব্যবহারে এর


করোনা ভাইরাস কী এবং কীভাবে


করোনা ভাইরাস কী এবং কীভাবে

করোনা ভাইরাস

করোনা ভাইরাস কোন সিংগেল স্পেসিজের ভাইরাসের নাম নয়। এটা একটি ফ্যামিলি। বিভিন্ন প্রানীর দেহে এই ফ্যামিলির দুইশর বেশি ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়েছে।

এরমধ্যে মানব দেহে পাওয়া গেছে করোনা পরিবারের ছয়টি প্রজাতির ভাইরাস। এবার চীনের উহান থেকে যে আউটব্রেকটা হয়েছে এটা সপ্তম বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। সবগুলি ভাইরাসেরই আলাদা নাম আছে। এবারকার ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয়েছে 2019 nCoV.

মানুষের শ্বাসনালীতে মূলত এই ভাইরাস আক্রমণ করে এবং শ্বাসনালীকে সংক্রমিত করে নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ প্রকাশ করে। অর্থাৎ জ্বর,সর্দি,কাশি ও শ্বাসকষ্ট – এই হলো এই রোগের লক্ষণ। রোগী মারা যায় তীব্র শ্বাসকষ্ট থেকে রেসপিরেটরি ফেইলিউর হয়ে।
ইতোপূর্বে সার্স ও মার্স নামে দুটি আউটব্রেকের কথা আমরা শুনেছি। এগুলো এই করোনা পরিবারের ভাইরাসেরই কাজ।
এই ভাইরাস ছড়ায় রেসপিরেটরি ড্রপলেটের মাধ্যমে। মানে হাঁচি, কাশি থেকে বাতাসে ছড়ায়, সেখানে থেকে শ্বাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে ঢোকে।
চিকিৎসা নেই। এখন অব্দি ভ্যাক্সিনও নেই। প্রতিরোধের উপায় হলো আক্রান্ত রোগীকে আলাদা করে রাখা। মাস্ক ব্যাবহার করা, নিয়মিত হাতধোয়া। কন্ট্যাক্ট যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা। এমনকি হ্যান্ডশেক না করারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
চীনের উহান থেকে এই রোগ ছড়ালো কি করে? বলা হচ্ছে ওখানকার একটা মাংসের বাজার থেকে এটা ছড়িয়েছে৷ সমূদ্র তীরবর্তী ঐ বাজারটি বাদুর,সাপ, মুরগী, কুকুর, সামুদ্রিক প্রানী সহ অনেকধরণের প্রানীর পাইকারি বাজার৷
তবে এটি সাধারণ ধারণা মাত্র। নতুন প্রজাতির ২০১৯ এনসিভি ভাইরাসের জিন সিকুয়েন্স পরীক্ষা করার পর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন মানবদেহে পূর্ববর্তী করোনা ফ্যামিলির ভাইরাসের মিউটেশন হয়ে নতুন প্রজাতির ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে। অর্থাৎ এটি মানবদেহেই মিউটেশনের ফল-এমনটিও হতে পারে।
সুতরাং এটি নিশ্চিত নয় যে চীনাদের খাদ্যাভ্যাসই এই রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী৷
পুনশ্চঃ করোনা ভাইরাস ইস্যুতে সবাই চীনাদের এক হাত নিচ্ছেন। এই ফাঁকে কেউ কেউ তাদের রেসিজম এবং ঘৃণাবাদ উগড়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ লিখেছেন হালাল খাবার খান বলে তারা ভাল আছেন। চীনাদের উপর অভিশাপ লাগছে ইত্যাদি।
অনেকেই হয়তো জানেন না, করোনা ফ্যামিলির পূর্ববর্তী একটি ভাইরাসের আউটব্রেকের নাম মারস (MERS). অর্থাৎ মিডিল ইস্ট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রোম। মধ্যপ্রাচ্য থেকে যে রোগের উৎপত্তি। ৮০০ লোক মারা গিয়েছিল এই রোগে। এবং বলা হয় উট থেকে এই রোগের সূত্রপাত।
সৃষ্টির আদি থেকেই মানুষ ও অন্যান্য প্রানীকূল পরস্পরের পাশাপাশি থেকেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছে৷ একে অন্যের রোগ শেয়ার করেছে। এটা নতুন কিছু না।
অহেতুক রেসিজম আর ঘৃণা ছড়াবেন না। অন্যের বিপদ নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করবেন না। সুস্থ থাকুন সুস্থ রাখুন। সবাইকে ভালবাসুন।

ত্বকের যত্ন:

Post a Comment

0 Comments